
‘ওরে ভোঁদড় ফিরে চা।
খোকার নাচন দেখে যা।’
প্রচলিত এই ছড়া দিয়েই দেশের বেশির ভাগ শিশু ভোঁদড় নামের প্রাণীটির সঙ্গে পরিচিত হয়। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বজুড়ে বিপন্ন এ প্রাণীকে দেখার সুযোগ কম শিশুরই হয়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় মিলেছে আশাব্যঞ্জক তথ্য। গবেষকেরা বলছেন, দেশের অন্তত ১৬টি জেলার জলাভূমিতে ভোঁদড় রয়েছে। তাঁদের আশা, বসতিগুলো রক্ষা করলে দেশের আরও অনেক স্থানে প্রকৃতির ওই দূতকে টিকিয়ে রাখা যাবে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ওটার বুলেটিন–এর গত সেপ্টেম্বর সংখ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মুনতাসির আকাশের ভোঁদড় নিয়ে করা একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এশীয় ছোট নখযুক্ত ভোঁদড়ের কয়েকটি নতুন বসতি এলাকা আবিষ্কৃত হওয়ার তথ্য উল্লেখ আছে।
মুনতাসির আকাশ ধারণা করছেন, হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারের সীমান্তঘেঁষা পাঁচটি সংরক্ষিত বনে অন্তত ১৫০টি ভোঁদড় থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এশীয় ছোট নখযুক্ত ভোঁদড় রয়েছে।
২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল আজিজের গবেষণায় বাংলাদেশের সুন্দরবনে ছোট নখযুক্ত ভোঁদড়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। সেখানে জরিপ করে ১৩টি ভোঁদড়ের দল ও ৫৩টি ভোঁদড় শনাক্ত করেন তিনি। তাঁর ধারণা, সামগ্রিকভাবে ওই বনে সর্বোচ্চ এক হাজারটি ভোঁদড় থাকতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি স্থানে সবচেয়ে বেশি। তিনি সীতাকুণ্ড, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও হবিগঞ্জেও ভোঁদড় খুঁজে পেয়েছেন।
অধ্যাপক আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ভোঁদড় আছে বলে মনে করা হয়। তবে বাস্তবে মূলত ছোট নখযুক্ত ভোঁদড় ও মসৃণ চামড়াযুক্ত ভোঁদড় দেখা যায়। ইউরোপ ও এশিয়ার ভোঁদড়ের কথা পুরোনো বইপত্রে থাকলেও বাস্তবে গত ৪০ বছরে এদের কোথাও দেখা যায়নি।
২০১৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জাহিদ আমিন রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীতে ৯০ বর্গকিলোমিটার অংশে ৫০-৬০টি মসৃণ চামড়ার ভোঁদড় চিহ্নিত করেন।
0 Comments