সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

অনন্য বিচিত্র জারুল

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উদ্ভিদ উদ্যান যদি উদ্ভিদ-গবেষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়, পার্ক সে ক্ষেত্রে অনেকটা পাঠশালার মতোই। সৌভাগ্য যে আমরা রমনা পার্কের মতো এমন একটি পাঠশালা পেয়েছি। যার সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে যুক্ত হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের কৃতী উদ্যান-স্থপতি আর এল প্রাউডলকের অন্যতম নিসর্গকর্ম ‘রমনা গ্রিন’। বলে রাখা ভালো, রমনা পার্ক আর রমনা গ্রিন এক বিষয় নয়। রমনা গ্রিন বলতে যা বোঝায়, তার পরিধি অনেক দূর বিস্তৃত ছিল। ১০০ বছরের ব্যবধানে যার অধিকাংশই এখন নিশ্চিহ্ন। তবু যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা আমাদের উদ্ভিদ ঐতিহ্যের উজ্জ্বল হীরকখণ্ডের মতো। বৃক্ষচর্চায় যার নান্দনিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রভাব আমাদের নানাভাবে কৌতূহলী করেছে। ভাবনার জগৎকে করেছে ঋদ্ধ। রমনা পার্কে ঘোরাঘুরির প্রথম দিকে অবচেতনে কিছু বৃক্ষ দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। বিচিত্র জারুল তার মধ্যে একটি। কয়েক বছরের ব্যবধানে উপলব্ধি করি, গাছটি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম। শরতে স্বল্প ফুলের দীনতায় দীর্ঘকালীন প্রস্ফুটন প্রাচুর্য এ গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লক্ষ করি, এমন একটি বিশেষায়িত বৃক্ষ রমনা পার্কের বাইরে খুব একটা নেই বললেই চলে। আবার জারুল গোত্রীয় হওয়ায় আমাদের নিজস্ব জারুল থেকে আলাদা করার জন্য ‘বিলাতি’ অভিধায় নামকরণ করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে আলাদা করে চেনানোর জন্য বিলাতি গাব, বিলাতি ধনেপাতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ‘বিলাতি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আদতে উল্লিখিত তিনটি গাছের সঙ্গেই বিলাতের কোনো সম্পর্ক নেই! এ কারণেই ফুলের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নাম বিচিত্র জারুল হওয়াই সমীচীন। বর্ষায় আমাদের প্রকৃতিতে বড় গাছে পুষ্পবৈচিত্র্য অনেকটাই কম। আষাঢ়ের প্রথম ভাগে চালতা আর কদম ফুল জৌলুশ হারায়। তত দিনে জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়াও রিক্ত-নিঃস্ব, হতশ্রী। কিন্তু বর্ষার এ বিবর্ণতাকে অতিক্রম করে শরতের ধোয়ামোছা সবুজ প্রকৃতি আমাদের নানাভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে। আবার বর্ষার জলাভূমির রাজসিক সৌন্দর্য পূর্ণতা পায় শরতে। তখন খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় শান্ত জলে বিচিত্র জলজ ফুল রঙের পসরা সাজায়। কিন্তু নগর উদ্যানে এমন শোভা অনেকটাই অধরা। তবে কয়েক দশক ধরে সীমিত পরিসরে বর্ষা-শরতের বর্ণাঢ্যতা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছে বিচিত্র জারুল।

Post a Comment

0 Comments